টিভি ব্রেকিংঃ
ঝিনুক টিভির পক্ষথেকে সকল দর্শকদের জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা। ঝিনুক টিভি আসছে নতুন নতুন সব আয়োজন নিয়ে। পাশেই থাকুন
সাইবার ক্রাইম: যা জানা জরুরি

সাইবার ক্রাইম: যা জানা জরুরি

সাইবার ক্রাইম এমন একটি অপরাধ যা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তথা ইন্টারনেট ব্যবহার করে সংঘটিত হয়। ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে অপরাধীরা এই অপরাধ সংঘটিত করে। অপরাধের শিকার ব্যক্তি সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন, যৌন হয়রানি কিংবা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। এর প্রধান শিকার নারীরা।

পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, শতকরা ৯০ ভাগ সাইবার ক্রাইমের শিকার নারীরা যাদের বেশির ভাগের বয়স ১৮ থেকে ২৪ বছর। সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস (সিসিএ) ফাউন্ডেশনের রিপোর্ট মতে, ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে ৬৮ শতাংশ নারী সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছে। সাইবার ক্রাইমের মাধ্যমে নারীদের একান্ত ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া বা ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে তাদের ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় এমনকি ধর্ষণ করা, ছবি বা ভিডিও এডিট করে ছড়িয়ে দেয়া, ফোন নম্বর ছড়িয়ে দেয়া, অশ্লীল বা হয়রানিমূলক মেসেজ বা মেইল পাঠানো প্রভৃতি অপরাধকর্মের শিকার হতে হচ্ছে।

নারীরা প্রাক্তন স্বামী বা প্রেমিকের দ্বারাই বেশি সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছেন। অনেক নারী এর শিকার হয়ে আত্মহত্যা পর্যন্ত করছেন। সাইবার ক্রাইমের শিকার নারীদের সহযোগিতায় পুলিশের ‌‌‘পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন’ নামে একটি বিশেষ ইউনিট কাজ করছে যার সকল সদস্য নারী।

বর্তমান বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়ছে সাইবার ক্রাইম। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) এর তথ্য মতে, বাংলাদেশে চলতি বছরের মার্চ মাসে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ৬১ লাখ ৪০ হাজার, যা এক মাস পূর্বে ফেব্রুয়ারি মাসে ছিল ১১ কোটি ২৭ লাখ ১৫ হাজার। করোনা মহামারীতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, গৃহিণী, চাকরিজীবী, বয়স্ক, বৃদ্ধ, শিশুসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষের হাতে চলে এসেছে ইন্টারনেট, যাদের অধিকাংশের ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই। ফলে অপরাধীরা এর সুযোগ নিয়ে অপরাধকর্মে লিপ্ত হয়। অধিকাংশ সাইবার ক্রাইম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কেন্দ্রিক হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অপরাধীরা ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেয়। তাই ব্যক্তিগত প্রোফাইলের পিন, পাসওয়ার্ড কিংবা ওটিপি গোপনীয় রাখা অত্যন্ত জরুরি।

এক্ষেত্রে দুর্বল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা, অন্যকে নিজের পাসওয়ার্ড জানানো, পাসওয়ার্ড মোবাইলে সেভ করে রাখা, অন্যের ডিভাইস থেকে ব্যক্তিগত প্রোফাইলে লগইন করা, চটকদার বা লোভনীয় কোন লিংকে প্রবেশ করে নিজের অজ্ঞতা বশত কোন ম্যালওয়্যার বা স্পাইওয়্যার ডাউনলোড করা, ফোন বা কম্পিউটার বা ল্যাপটপ চুরি কিংবা হারিয়ে যাওয়া প্রভৃতি কারণে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত অথবা ব্যক্তিগত প্রোফাইল হ্যাকিং হতে পারে।

অপরাধীরা অন্যের প্রোফাইল হ্যাক করে উস্কানিমূলক তথ্য প্রচার, চাঁদা দাবি, হয়রানিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। এইজন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা মেইল ব্যবহারে অধিকতর সচেতনতা জরুরি।

ব্যক্তিগত পাসওয়ার্ড শক্তিশালী ও গোপনীয় রাখতে হবে এবং একাউন্টের সিকিউরিটি ও প্রাইভেসি সেটিংস সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা দরকার। পাবলিক ডিভাইস বা অন্যের ডিভাইসে প্রোফাইল লগইনের প্রয়োজন হলে সঠিকভাবে লগআউট নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রাইভেট মোডে ব্রাউজ করলে অধিকতর সুরক্ষা পাওয়া যায়। প্রোফাইল হ্যাকিং অথবা সিমকার্ড, ফোন, ল্যাপটপ বা কম্পিউটার চুরি হলে সাথে সাথে নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে হবে এবং হারানো ডিভাইসটি উদ্ধারে পুলিশের সহযোগিতা নিতে হবে। এছাড়া ফোনের ‘গুগল ফাইন্ড মাই ডিভাইস’ অপশনটি চালু করে রাখা যেতে পারে।

অনলাইনে নতুন কারো সাথে পরিচয় হলে সতর্ক থাকতে হবে। অনেকেই নিজের পরিচয় গোপন করে সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রতারণা করে থাকে। যে ধরণের ছবির জন্য নিজের আত্মসম্মান ক্ষুণ্ণ হয় বা সামাজিকভাবে হেয় হতে হয় এমন একান্ত ব্যক্তিগত ছবি না উঠানো উচিত।

বর্তমানে সাইবার ক্রাইমের ফলে সমাজে উগ্রবাদ, গুজব, অপপ্রচার, পর্নোগ্রাফি, সাইবার বুলিং, চাঁদাবাজি, পাইরেসি প্রভৃতি অপরাধ বহুগুণ বেড়েছে। সকল সাইবার ক্রাইম অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তথ্য-প্রযুক্তিতে অধিক দক্ষ হতে হবে। সেই সাথে এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে পারিবারিকভাবে পিতা-মাতা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। এছাড়া পাঠ্যপুস্তকে সাইবার ইথিকস ও সাইবার ক্রাইম অন্তর্ভুক্ত করা এখন সময়ের দাবি।

শেয়ার করুনঃ

Comments are closed.

© All rights reserved © 2020 | jhenuktv.com
Developed BY POS Digital